বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসা পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশি মুসলিমরা বেশিরভাগ সময়ই চিন্তিত থাকেন। কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসা পাওয়া যাবে এ নিয়ে তাদের মনে থাকে নানা রকম জিজ্ঞাসা।
আপনিও যদি তাঁদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্য। কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসা পাওয়া যাবে এই পোস্টে আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
ওমরাহ একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সুন্নাহ এবাদত। অনেক এটিকে ফরজও বলে থাকেন। যাহোক এবাদত হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম । ওমরাহ এর শাব্দিক অর্থ জিয়ারত বা সাক্ষাৎ করা। কার্যক্রমের দিক থেকে হজ্বের সাথে এর সাদৃশ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসল্লী প্রতিবছর ওমরা পালন করতে যান। বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসা পাওয়ার জন্য মূলত একটি বৈধ অনুমোদন প্রাপ্ত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী জমা দিতে হয়। এরপর যথাযথ কর্তৃপক্ষের ভিসা অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় যা সরাসরি সৌদি সরকারের অধীনে হজ্জ মন্ত্রণালয়ের দ্বারা পরিচালিত হয়।
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসা পেতে চান তাহলে আপনাকে যেসব ধাপ পাড়ি দিতে হবে সেগুলো নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করব।
একটি বৈধ ও নির্ভরযোগ্য এজেন্সির শরণাপন্ন হওয়া।
শুরুতেই আপনাকে একটি নির্ভরযোগ্য বৈধ এজেন্সি খুঁজে বের করে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এই এজেন্সির কাছ থেকে আপনি সর্বাত্বক সহযোগিতা এবং দিকনির্দেশনা সমূহ পাবেন।
এজেন্সি আপনাকে ভিসা পাওয়ার নিয়ম গুলো জানতে, বুঝতে এবং সেঅনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। এরপরে তারা সরকারের নিকট একটি নামের লিস্ট পাঠাবে। মাইগ্র্যান্ট রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত কোন এজেন্সি এক বছরে এক হাজার মানুষের নামের একটি লিস্ট পাঠাতে পারে। এজেন্সি সরকারের কাছে লিস্ট পাঠানোর পর সরকার তা সৌদি হজ-ওমরা মন্ত্রণালয়ের নিকট পাঠাবে।
এজেন্সির কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি জমা প্রদান।
যখন আপনি এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করবেন তখন এজেন্সি আপনার প্রোফাইল তৈরি করার জন্য কিছু কাগজপত্র চাইবে। সেগুলো হলোঃ
একটি পূরণকৃত ভিসা ফর্ম।
একটি বৈধ পাসপোর্ট ।
সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ দুই কপি ছবি।
আসা-যাওয়ার টিকিট এর কপি।
সৌদিতে গিয়ে কোথায় থাকবেন তার প্রমাণ-পত্র যেমন হোটেল বুকিং এর কপি।
প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদ।
যদি আপনি নারী হন এবং কোন মারহাম ছাড়া ভ্রমণ করেন তাহলে একটি বিশেষ পূরণকৃত ফর্ম।
এজেন্সিকে অবশ্যই ওমরাহ যাত্রীর বাংলাদেশে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে হবে। যদি তারা এতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হতে পারে। কিন্তু যদি অন্য কোন জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয় যেমন, ওমরাহ যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লেন, মারা গেলেন বা আইনগত কোন ঝামেলায় পড়লেন তাহলে এ নিয়ম কার্যকর হবে না।
এজেন্সিকে ওমরা যাত্রীর কাছ থেকে গৃহীত সকল অর্থের পূর্ণ হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। এই অর্থ বিশেষায়িত কোন ব্যাংক একাউন্টে রাখতে হবে এবং এই অর্থের দ্বারা প্লেনের টিকেট, থাকার জায়গা খাবার এবং ভ্রমণের ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তীতে এই ব্যয় সংক্রান্ত সকল নথি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রেরণ করতে হবে। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যখন আপনি এজেন্সিকে টাকা দেবেন তখন আপনার নিজের জন্য ওমরাহর প্যাকেজ ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ওমরার খরচ আমাদের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারেন।
ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদান।
এরপরে আপনাকে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট ফ্রি প্রদান করতে হবে। এই ফি এর অর্থ এজেন্সি ও প্যাকেজ ভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
ভিসা অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা।
সকল কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দেওয়ার পর আপনার এজেন্ট আপনার ভিসার জন্য কাজ করা শুরু করবে। ভিসা প্রসেসিং এর কিছুদিন সময় লাগে এজন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আপনার আমরা ভিসার আবেদন পর্যালোচনা এবং পরীক্ষা করবে।
ভিসা প্রাপ্তি।
আপনার ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পরে এজেন্ট আপনাকে ভিসা প্রদান করবে এবং আনুষঙ্গিক সকল প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র দিয়ে আপনাকে সরবরাহ করবে। এরই সাথে আপনার টিকিট কাটা এবং হোটেল বুকিংএও সহায়তা করবে। এসব কিছুর পরে আপনি নিশ্চিন্তে সৌদি আরব গিয়ে ওমরাহ করতে পারেন। তবে হ্যাঁ কিছু বিষয় এর উপরে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেমন আপনি কি কি নিতে পারবেন এবং কি কি নিতে পারবেন না । সেটি এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পেতে হলে কিছু কিছু বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।একজন ওমরাহ যাত্রী হিসেবে কিছু পূর্ব শর্ত আপনাকে পূরণ করতে হবে । সেগুলো হলো:
ওমরাহতে যেতে হলে একটি সঠিকভাবে পূরন কৃত ফর্ম সৌদি কন্স্যুলেটে পাঠাতে হবে। নিজের ঠিকানা বড় খামের ওপরে স্পষ্ট অক্ষরে লিখতে হবে।
আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ ন্যূনতম ছয় মাস থাকতে হবে।
আপনার বয়স ১২ বছর বা তার অধিক হতে হবে।
সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি আবেদন ফরমের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা।
সৌদি আরবে পৌঁছানোর তারিখের অন্তত ১৪ দিন আগে টিকিট কাটতে হবে, মনে রাখা ভালো টিকিটের মূল্য অফেরতযোগ্য।
সঠিকভাবে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করার প্রমাণ থাকতে হবে।
সৌদি আরব পৌঁছানোর ফ্লাইটের অন্তত তিন দিন আগের পি.সি.আর টেস্ট এর রিপোর্ট থাকতে হবে।
অন্তত ১৪ দিনের মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স থাকতে হবে।
অনেক সময় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং ভিজিটিং কার্ডের কপি দেখাতে হতে পারে।
যদি একজন নারী ওমরাহর জন্য ভ্রমন করেন তাহলে একজন মারহাম (যার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ) তার সাথে যেতে হবে যেখানে মারহামের বয়স ন্যূনতম ১৮ হতে হবে। যদি তারা বিবাহিত হন তাহলে কাবিননামা প্রদান করতে হবে।
যদি ওমরাহ যাত্রী মহিলার বয়স ৪৫ এর বেশি হয় তাহলে তিনি মারহাম ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তার মারহামের স্বাক্ষর সম্বলিত অনুমতিপত্র লাগবে।
যাদের বয়স ১৮ এর নিচে অর্থাৎ শিশুদের ওমরাহ যাত্রার ক্ষেত্রে তাদের জন্ম সনদ প্রয়োজন হবে।
আমরা ভিসার আবেদন করা খুবই সহজ একটি কাজ। আমি আপনাদের জন্য সহজভাবে এটিও ধাপে ধাপে আলোচনা করব।
প্রথমে আপনাকে সৌদি সরকারের অধীনস্থ হজও উমরাহ মন্ত্রণালয়ে ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
প্রোফাইল তৈরির পর অনলাইন ভিসা ফর্মটি সঠিকভাবে সময় নিয়ে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে তথ্যগুলো যেন সঠিক হয় কারণ এ সকল তথ্যের উপর নির্ভর করেই ভিসা দেওয়া হবে।
এরপরে আপনাকে প্রয়োজনীয় ওয়েব সাইটে আপলোড করতে হবে।
এখন প্রয়োজনীয় অনলাইন ফ্রি প্রদান করতে হবে এবং তা বৈধ মাধ্যম দিয়ে প্রদান করতে হবে।
এবার আপনার কাজ হলো ভিসার জন্য অপেক্ষা করা সাধারণত দুই দিন বা তিন দিনের মধ্যে উত্তর চলে আসে ।
এরপরে আপনি সৌদি সরকারের কাছ থেকে ভিসা পাবেন।
আপনার ভিসার অগ্রগতি কতটুকু বা ভিসা কোন অবস্থায় আছে সেটি আপনি ঘরে বসে অনলাইনেই চেক করতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসার অবস্থা চেক করার জন্য সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট চেক করতে হবে। যেভাবে চেক করবেন তার নিয়ম নিম্নরুপ:-
১.প্রথমত সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পোর্টাল লিংক। এরপর বারকোড অপশন এ ক্লিক করতে হবে।
২.এরপর আপনার পাসপোর্ট নাম্বার পূরণ করতে হবে এবং নাম সিলেক্ট করতে হবে। প্রদত্ত তথ্য দিয়ে ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিতে হবে। এরপর আপনি স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।
৩.এছাড়াও আপনি সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করেও আপনার ভিসার স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন।
না, ওমরাহ ভিসার জন্য আপনি আবেদন করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে বাংলাদেশে অবস্থিত একটি এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে ভিসা ফি হচ্ছে ২৩ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা। এর সাথে যুক্ত হবে ভিসা প্রসেসিং ফি যেটি হল ৬,৩৬৪ টাকা থেকে ১৫,৬৯২ টাকা।
সাধারণত সাত থেকে দশদিনের বেশি নয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পাঁচ দিনের মধ্যেই ভিসা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ থেকে ওমরা ভিসা পাওয়ার সাধারণত ১৫ দিনের মধ্যে সৌদি আরবে প্রবেশ করা যায়। তবে অবস্থার বিচারে এই সময়ের তারতম্য হতে পারে।
সাধারণত বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসার মেয়াদ ২০ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত থাকে তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এই মেয়াদ মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিন হয়ে থাকে।
এখন আপনি বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসা পাওয়ার সকল নিয়মকানুন জানেন। মূলত আপনার ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজতর করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণপত্র, বৈধ পাসপোর্ট এবং যাওয়া আসার টিকিট।
যদি এমন হয় যে আপনি সবচেয়ে কম খরচে ওমরাহর জন্য প্যাকেজ খুঁজছেন তাহলে ইটস হলিডেজ লিমিটেড হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। নিঝঞ্ঝাট এবং চিন্তামুক্ত ওমরাহর জন্য সেরা এই প্রতিষ্ঠানটি ৭-১০ দিনের মধ্যেই শেষ করে ভিসা প্রসেসিং।
আশা করি, আমাদের আর্টিকেলটি আপনাকে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ ভিসা পাওয়ার জন্য পথপ্রদর্শক হবে। দুনিয়া আখেরাতের অশেষ নেকি হাসিলের জন্য একটি অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। মহান আল্লাহ আপনার ওমরাহকে কবুল করুন। ফি আমানিল্লাহ।