ওমরাহ পালনের মাসলা-মাসায়েল নিয়ে আমাদের মনে থাকে নানা প্রস্ন। আবার একই জায়গায় বাংলা ভাষায় সব মাসায়েল খুঁজে পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য। এজন্য আমরা আপনাদের জন্য একসাথে নিয়ে এসেছি ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব মাসায়েল। আমরা এই পোস্টে ওমরাহ সম্পর্কে যা কিছু জানা দরকার তা নিয়ে আলোচনা করব।
আল্লাহ কোরআনে বলেন, “আর তোমরা হজ ও ওমরাহ পূর্ণ কর আল্লাহর উদ্দেশ্যে…।” সুরা বাকারা: আয়াত ১৯৬।
ওমরাহ, হজ্জ সদৃশ্য একটি সুন্নাত এবাদত। ওমরাহ কে হজে আসগার বা ছোট হজও বলা হয়। ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ভ্রমণ করা বা জিয়ারত করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশার ইহরাম বাঁধা অবস্থায় বাইতুল্লাহ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া সাঈ করার পর মাথার চুল কেটে ফেলার আনুষ্ঠানিকতাকেই ওমরাহ পালন করা বলা হয়। জীবনে অন্তত একবার ওমরাহ করার সুন্নাত। নবী মুহাম্মদ (সা) জীবদ্দশায় চারবার ওমরাহ করেছেন বলে জানা যায়।
কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার ওমরাহ আদায় করেছেন? তিনি বলেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার ওমরাহ জুলকাদা মাসে যখন মুশরিকরা তাঁকে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল।
পরবর্তী বছরের জুলকাদা মাসের ওমরাহ, যখন মুশরিকদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, জিরানার ওমরাহ, যেখানে নবী (সা.) গনিমতের মাল, সম্ভবত হুনায়নের যুদ্ধে বণ্টন করেন। আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার হজ করেছেন? তিনি বলেন, ‘একবার’। (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৮)
ওমরাহ পালনের ফজিলত অপরসীম। ওমরাহ আমাদের ধর্মীয় জীবনের পাশাপাশি ব্যাক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও ব্যাপক ফজিলত বয়ে আনে।
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহ পর্যন্ত মাঝখানের গোনাহগুলোর জন্য কাফফারা স্বরূপ।’ (বোখারি: ১৬৮৩, মুসলিম: ৩৩৫৫)।
ওমরাহ গুনাহ মাফের সাথে অর্থনৈতিক জীবনেও সমৃদ্ধি আনে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ আদায় করো। কেননা, হজ ও ওমরাহ দারিদ্র্য বিমোচন ও গোনাহ দূর করে দেয় ঠিক সেভাবে, যেভাবে হাঁপরের আগুন লোহা, সোনা ও রুপা থেকে ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি: ৮১০)।
ওমরাহ হজের নির্ধারিত সময় (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত) ব্যতীত বছরের যেকোনো সময়ই করা যায়। আপনি হজের সাথেও ওমরাহ পালন করতে পারবেন, এবং একই সফরে একাধিক ওমরাহ করারও অনুমতি আছে। ওমরাহর নিয়মগুলি কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেষ করা সম্ভব। তবে, ভিড়ের উপর নির্ভর করে সময় কম বা বেশি লাগতে পারে। যানজট এড়াতে ও নিরাপত্তার স্বার্থে রাতের বেলায় ওমরাহ আদায় করা ভালো।
ওমরাহর ফরজ দুইটি।
ইহরাম বাঁধা
বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা।
সাফা-মারওয়া সাঈ(আসা যাওয়া) করা।
হলক্ব বা কসর (মাথার চুল মুণ্ডন বা ছোট করা)।
ইহরাম শব্দটি এসেছে হারাম শব্দ থেকে । এর অর্থ হলো কোনো জিনিসকে নিজের ওপর হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেওয়া। হজ ও ওমরাহ পালনের নিয়তে যারা মক্কায় গমন করেন, তাদের মিকাত (ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান) অতিক্রম করার সময় ইহরামের জন্য কাপড় পরে নেওয়াকে ইহরাম বাঁধা বলা হয়। পুরুষের জন্য ইহরামের কাপড় দুই টুকরা সেলাই ছাড়া কাপড় আর মহিলাদের জন্য স্বাভাবিক পোশাক।
ইহরামের ওয়াজিব দুইটি।
মীকাত এর স্থানে ইহরাম বাঁধতে হবে।
ইসলামে নিষিদ্ধ এমন কোন কাজ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় করা যাবে না।
ইসলামে হালাল এমন বেশ কিছু কাজ ইহরাম বাঁধার পর আর করা যায় না। করলে ইহরাম নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। সেগুলো হলো:-
আতর বা সুগন্ধি জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা।
সেলাই করা কোন কাপড় পড়া (পুরুষের জন্য)।
মাথা ঢেঁকে রাখা (পুরুষের জন্য)।
মুখ ঢেঁকে রাখা।
শরীর থেকে যেকোন চুল কাটা বা উপড়ে ফেলা।
হাত বা পায়ের নখ কাটা।
ঝগড়া-বিবাদ করা।
কোন প্রাণী শীকার করা।
কাউকে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া।
স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা বা এধরণের ইংগিত আছে এমন কোন কাজ যেমন চুম্বন করা।
ইহরাম বাঁধা ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় ছাড়া কোন ভিন্নতা নেই। সেগুলো হলো :-
মহিলাদের মাথা ঢেঁকে রাখা ওয়াজিব।
মহিলারা এমন নেকাব ব্যবহার করবেন না যা তাঁদের মুখ ঢেকে ফেলে। তবে তাঁরা মারহাম ব্যাতিত অন্যদের সামনে পর্দা করবেন।
মহিলাদের সেলাই করা কাপড় পরতে কোন বাঁধা নেই।
বালক-বালিকা যদি বোধশক্তি সম্পন্ন না হয় তাহলে করণীয়:-
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে যদি ভাল-মন্দ, পবিত্রতা-অপবিত্রতা সম্পর্কে জ্ঞান না রাখে তাহলে তাদের অভিভাবকগণকে তাদের পক্ষে ইহরাম, ওমরাহ ও হজের নিয়ত করে নিতে হবে।
ছেলে হলে তাদেরকে সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করাতে হবে ; আর মেয়ে হলে মেয়েদের নির্ধারিত পোশাক পরিধান করাতে হবে।
তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবককে তালবিয়া পড়তে হবে।
এ ভাবে বাচ্চা মুহরিম বলে গণ্য হবে।
প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য ইহরাম অবস্থায় যা যা নিষিদ্ধ; বাচ্চার জন্যও তা নিষিদ্ধ।
বোধশক্তি সম্পন্ন বালক-বালিকার জন্য করণীয়:-
বালক-বালিকা যদি বোধ-শক্তি সম্পন্ন হয় অর্থাৎ পাক-পবিত্রতার জ্ঞান রাখে, তবে তারা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে ইহরাম বাঁধবে এবং তারা ইহরামের সময় ঐ নিয়মাবলীগুলো পালন করবে, যা বয়স্ক ব্যক্তিরা পালন করে থাকে।
মনে মনে ইহরাম ছেড়ে দেওয়ার নিয়ত করতে হবে। এর পর হালাক্ব বা কসর ( মাথার চুল মুণ্ডন বা ছোট করা) এর মাধ্যমে ইহরাম শেষ হবে।
তালবিয়া হল সেই দুয়া যা হজ বা ওমরাহর সময় পড়া হয়। ইহরাম বাঁধা থেকে তাওয়াফ শুরু পর্যন্ত তালবিয়া পাঠের বিধান। তালবিয়া হচ্ছে : ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’
অর্থ : আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নে’মত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৫৪৯; মুসলিম, হাদিস : ২৮১১)
পুরূষদের জন্য তালবিয়া পাঠের বিধান হল উচ্চস্বরে। আর নারীরা পাঠ করবেন মৃদুস্বরে।
তাওয়াফ অর্থ কোন কিছুর চারদিকে চক্রাকারে ঘোরা বা প্রদক্ষিণ করা। হজ ও ওমরাহর ক্ষেত্রে তাওয়াফ হল বাইতুল্লাহ বা কাবাঘরের চারদিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করা।
তাওয়াফের কিছু ফরজ রয়েছে অর্থাৎ এগুলো না করলে তাওয়াফ সম্পূর্ণ হয় না। তাহলে তাওয়াফ আবার করতে হবে। সেগুলো হলো:-
সাত চক্করের অন্তত অর্ধেকের বেশি পরিপূর্ণ করা।
কাবার বাইরে কিন্তু মসজিদুল হারামের ভেতরে তাওয়াফ করা।
নিজে নিজে তাওয়াফ করা। হুইল চেয়ারে বসে বা অন্যকারো সহায়তা নিয়ে হলেও নিজের তাওয়াফ নিজে সম্পন্ন করা।
তাওয়াফ করার সময় নিচের এই ওয়াজিব গুলো ছুটে গেলে তাওয়াফ পুনরায় করতে হবে অথবা কাফফারা দিতে হবে।
শরীর পাক-সাফ থাকা।
সতর ঢাকা থাকতে হবে ।
যাঁরা হাঁটতে পারবেন তাঁরা অবশ্যই হেঁটে তাওয়াফ করবেন।
ঘড়ির কাঁটার উল্টা দিকে ঘুরে ঘুরে তাওয়াফ করতে হবে।
হাতীমের চারপাশ দিয়ে ঘুরতে হবে।
কাবার সাত চক্কর সম্পূর্ণ করতে হবে।
যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে গণনা ঠিক রাখার তবে যদি একান্তই কেউ ভুলে যান তাহলে যেটুকু নিয়ে সন্দেহ আছে সেটুকু পুনরায় করতে হবে। উদাহরণসরূপ যদি ৫ ও ৬ এর মধ্যে সন্দেহ থাকে তাহলে ৫ ধরে এগুতে হবে।
ইব্রাহিম (আ) এর স্ত্রী বিবি হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল (আ) এর স্মৃতি বিজড়িত সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে আসা যাওয়ার রীতিকে সাঈ করা বলা হয়। এটি ওমরাহর একটি ওয়াজিব কাজ। সাফা থেকে মারওয়া যাওয়া হলে একবার সাঈ হয়। সুতরাং সাত নম্বর সাঈ শেষ হবে মারওয়াতে গিয়ে। বর্তমানে সাফা-মারওয়া পর্বত গুলো বাস্তবে নেই কিন্তু সাঈ করার সুবিধার জন্য এগুলোর নিশানা গুলো সুন্দরভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে।
সাঈ করার একটিই মাত্র ফরজ। সেটি হল সাফা-মারওয়ার প্রকৃত স্থানে সাঈ করা অন্য কোথাও নয়।
সাঈ করার কিছু ওয়াজিব রয়েছে। এগুলোর কোন একটি বাদ পড়ে গেলে সাঈ আবার করতে হবে অথবা কাফফারা দিতে হবে।
নিজের সাঈ নিজেকেই করতে হবে। হুইল চেয়ারে বসে বা অন্যকারো সাহায্য নিয়ে হলেও নিজেকেই করতে হবে।
অবশ্যই তাওয়াফ করার পরে সাঈ করতে হবে আগে নয়।
সাঈ সাফাতে শুরু করতে হবে এবং মারওয়াতে শেষ করতে হবে।
সম্পূর্ণরূপে সাতবার সাঈ করতে হবে।
যদি কারো হাঁটার সামর্থ্য থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই হেঁটে সাঈ করতে হবে।
সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফা যাওয়া আসার দূরত্ব পূর্ণরুপে অতিক্রম করতে হবে।
ওমরাহতে সংঘটিত ভুলের ওপর নির্ভর করে তিনটি পদ্ধতিতে কাফফারা আদায় করা যায়।
পশু জবেহ করা।
রোযা রাখা।
গরীব মানুষদের খাওয়ানো বা দান-সদকা করা।
নিচে বর্ণিত কাজগুলোর যেকোনো একটি ছুটে গেলে বা করতে ভুল করলে আল্লাহর রাস্তায় পশু জবেহ করতে হবে।
তাওয়াফের ওয়াজিব গুলো ।
সাঈ করার ওয়াজিব গুলো।
মাথা মুণ্ডন করা।
সুগন্ধি ব্যবহার করলে।
মানুষের শরীরের আকারে সেলাই করা কাপড় পড়লে।
মাথা ও মুখমন্ডল ঢাকলে।
শরীরের যেকোনো চুল মুণ্ডন করলে, কেটে ছোট করলে বা উপড়িয়ে ফেললে।
পাত বা পায়ের নখ কাটলে।
স্রী কে চুম্বন বা সম্ভোগ করলে। কিংবা এ জাতীয় যেকোন কাজ করলে বা কথাবার্তা বললে।
ওমরাহ করার ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙ্গা বা ভুল-ত্রুটিগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ছাড় দেয়া হয় এমন এবং ছাড় দেওয়া হয়না এমন। এই দুটিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে পুরোপুরি এবং আংশিক।
যেমন মনে করি ওমরাহ করার সময়ে কোন দুর্ঘটনার কারনে ইনফেকশান রোধ করার জন্য একটি নখ তুলে ফেলতে হল, এটি ছাড় দেওয়া যাবে এমন একটি ত্রুটি । আবার যদি কেউ নিজ ইচ্ছায় একটি নখ উঠিয়ে ফেলে তাহলে এটি হবে ছাড় দেওয়া যাবেনা এমন আংশিক নিয়ম ভাঙ্গা। আর কেউ যদি নিজ ইচ্ছায় সব নখ উঠিয়ে ফেলে তবে তা হবে পুরোপুরি নিয়ম ভাঙ্গা। নিচের ছকে আমরা বিষয়টি ছকের মাধ্যমে সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।
নিয়ম ভাঙ্গার ধরণ |
কাফফারার ধরণ (যদি একাধিক কাফফারা কার্য্যকর হয় তাহলে যেকোন একটি উপায়ে আদায় করলেই হবে) |
||
দম |
রোযা রাখা |
গরীবদের খাওয়ানো বা সদকা করা |
|
পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়না এমন |
✔ |
||
আংশিক ছাড় দেওয়া হয়না এমন |
✔ |
||
পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয় এমন |
✔ |
✔ |
✔ |
আংশিক ছাড় দেওয়া হয়না এমন |
✔ |
✔ |
জবেহ করার জন্য দুম্বা বা ভেড়া, ছাগল, গরু কিংবা উট নেওয়া যেতে পারে।
ভেড়া বা দুম্বার বয়স কমপক্ষে ছয় মাস, ছাগলের বয়স কমপক্ষে এক বছর, গরু কমপক্ষে দুই বছর এবং উটের ক্ষেত্রে বয়স পাঁচ বছর হওয়া উচিত।
একটি উট বা একটি গরু জবেহ করার মাধ্যমে সাতটি কাফফারা আদায় করা যাবে।
পশু নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সেগুলোর কোন ত্রুটি না থাকে ও রোগাক্রান্ত না হয়। মুখ, নাক, কান, পা লেজ ইত্যাদি অংগও যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
পশু হুহুদে হারাম ( মক্কার বাউন্ডারি) এর মধ্যে জবেহ করতে হবে।
জবেহকৃত পশুর মাংস মক্কার সেইবসব অধিবাসীদের মধ্যে বিলি করতে হবে যারা যাকাত নিতে পারেন।
রোযা রাখার মাধ্যমে কাফফারা দিতে চাইলে তিন দিন রোযা রাখতে হবে। তিন দিন এক নাগাড়ে না হলেও সমস্যা নেই।
এভাবে কাফফারা দিতে চাইলে এমন কাউকে দুইবেলা খাওয়াতে হবে যিনি মক্কার অধিবাসী এবং যিনি যাকাত গ্রহন করতে পারেন।
আবার সাদকা দিতে চাইলে একইরকম ব্যক্তিকে সাদকার পরিমান অথবা যাকাত-উল-ফিতর পরিমান কাফফারা হিসেবে দেয়া যাবে।
ওমরাহ সম্পর্কিত বিষয় গুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা।
১.দম: দম শব্দের অর্থ। ইসলামের পরিভাষায় হজ বা ওমরাহর সময় কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে, ভুল হলে বা নিষিদ্ধ কোন কাজ ভুল বসত করে ফেললে পশু জবেহ করার মাধ্যমে কাফফারা দেওয়াকে দম বলা হয়।
২.ফরজ কাজ: যেগুলো অবশ্যই করতে হবে। ফরজ কাজ গুলোর একটি ছুটে গেলে বা নষ্ট হলে হজ বা ওমরাহ পুনরায় করতে হবে।
৩. হাজরে আওয়াদ বা কালো পাথর: এই পাথরটি একটি আদি-পিতা আদম (আ) জান্নাত থেকে নিয়ে এসেছিলেন। এটির রঙ তখন ছিল দুধের মত সাদা। আদম সন্তানদের পাপ শুষে নিতে নিতে এটি কালো হয়ে গিয়েছে।
৪. হালাক্ব: মাথার চুল মুণ্ডন করা।
৫. হারাম: ইসলাম বা শরীয়ত দ্বারা নির্ধারিত মক্কার সীমানা। এই সীমানার মধ্যে পশু শীকার, গাছ কাটা, মেষপালন ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
৬. হাতীম: এটি কাবার একটি অংশ। কোরাইশরা যখন কাবা নির্মাণ করছিলেন তখন তাঁদের কাছে এই অংশ নির্মানের জন্য হালাল সম্পদ না থাকার কারণে তাঁরা এটি বাদ দিয়ে কাবা নির্মাণ করেন।
৭. ইহরাম: ইহরাম অর্থ হারাম করে নেওয়া। যখন হজ বা ওমরাহ করার জন্য নিয়ত করা হয় এবং তালবিয়া পড়া হয় তখন কিছু হালাল কাজকে হারাম করে নেওয়াকেই ইহরাম বলা হয়।
৮. হিল: মীকাত থেকে হারামের সীমানা পর্যন্ত স্থানকে হিল বলা হয়। হারামে যেগুলো করা হারাম সেগুলো এখানে করা হালাল।
৯. ইস্তিলাম: হাজরে আসওয়াদকে ছোঁয়া বা চুম্বন করাকে ইস্তিলাম বলা হয়।
১০.কাবা: বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরকে কাবা বলা হয়। এটি মসজিদুল হারামের মাঝখানে অবস্থিত। এই প্রথম নির্মিত এবাদতখানা। মানুষ সৃষ্টিরও অনেক আগে আল্লাহ এটিকে ফেরেস্তাদের দিয়ে নির্মাণ করান। পরবর্তীতে আদম (আ), ইব্রাহিম (আ), ইসমাঈল (আ), কোরাইশরা, আব্দুল্লাহ বিন যোবাইর এবং আব্দুল মালিক পর্যায়ক্রমে কাবা পুনরায় নির্মান, মেরামত ও মসজিদের আকার বৃদ্ধি করেন। এটি মুসলমানদের কিবলা এনং সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান।
১১. কাফফারা: কাফফারা অর্থ প্রায়শ্চিত্ত। হজ বা ওমরাহ করার সময় কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে বা ভুল হলে পশু জবেহ, রোযা রাখা বা দান সদকা করাকে কাফফারা বলা হয়।
১২. মাকামে ইব্রাহীম: যে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম (আ) কাবা নির্মান করেন।
১৩. সাফা: যেখান থেকে সাঈ শুরু করা হয়।
১৪. মারওয়া: যেখানে সাঈ শেষ করা হয়।
১৫. মিলাইন আখরাদাইন: সাফা ও মারওয়ার মাঝের সবুজ বাতি যেখানে সাঈকারি পুরুষদের দৌড়ানোর বিধান রয়েছে।
১৬. মুলতাজিম: হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মধ্যকার দেওয়াল যেখানে দোয়া করা সুন্নাত।
১৭. মীকাত: হজ বা ওমরাহ পালনকারিদের জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান। মীকাতে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব।
১৮. কসর: মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা।
১৯. রমল: দ্রুত পায়ে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্কর শেষ করারে রমল বলে।
২০. রুকুনে ইয়ামেনি: কাবার তৃতীয় কোনা। এটি ইয়ামেনের দিকে অবস্থিত।
২১. সাঈ: হজ বা ওমরাহর সময় সাফা মারওয়া পাহাড়ের স্থানে সাতবার আসা যাওয়াকে সাঈ বলা হয়। সাঈ সাফাতে শুরু আর মারওয়াতে শেষ করতে হয়।
২২. তালবিয়া: ইহরাম বাঁধার পর থেকে যে দোয়া পড়া হয় তাকে বলে তালবিয়া। তালবিয়া হচ্ছে : ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’
অর্থ : আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নেয়ামত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।
২৩. তাওয়াফ: কাবার চারদিকে ঘড়ির কাঁটার উলটা দিকে সাতবার ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়।
২৪. ওমরাহ: ইহরাম বাঁধা, কাবা তাওয়াফ করা, ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করাই হল ওমরাহ
২৫. ওয়াজিব: জরুরি কাজ যেগুলো ছুটে গেলে দম করার মাধ্যমে কাফফারা দিতে হয়।
২৬. মাতাফ: তাওয়াফ করার স্থানকে মাতাফ বলা হয়।